দুই সন্তান ও এক মেয়ে নিয়ে ভালোই কাটছিল মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাথুলী গ্রামের ৬০ উর্ধ্ব বয়সী মাবোয়া খাতুনের। স্বামী কফেল উদ্দীন মা;রা গেছে ১৩ বছর আগে। তার পর থেকেই দুই সন্তানের সংসারে বসবাস তার। কিন্তু সম্প্রতি নিজের শেষ সম্বল বসতভিটার জমিটুকু বড় ছেলে মিঠু আহম্মেদকে লিখে দেবার পর থেকেই যত বিপত্তি। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বড় ছেলে ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন। এখন ঘুরছেন অন্যের দ্বারে দ্বারে। খেয়ে না খেয়ে কাটছে ওই বৃদ্ধার দিনপাত।
জানা গেছে, নিজ বাসস্থানে আশ্রয়ের জন্য মাবেয়া খাতুন আবেদন করেন গাংনী উপজেলার ধলা পুলিশ ক্যাম্পে। পুলিশ বাড়িতে বার বার তুলে দিলেও আবারও তাকে বের করে দেয়া হয়। পুলিশ সুপার রাফিউল আলম জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকেও জানিয়েছেন। তারপরও কোনো সমাধান মেলেনি।
মাবেয়া খাতুন জানান, সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে বড় ছেলে মিঠু আহম্মেদকে ২০১০ সালে মাঠের জমিজমা, গরু ছাগল বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা খরচ করে পাঠান সৌদি আরবে। ১০ বছর বিদেশ খাটার পর ফিরে আসেন দেশে। দেশে এসে বিয়ে করেছেন। করছেন মৌসুমি ফসল বেচাকেনার ব্যবসা। সংসারও ভালোই চলছে। এরই মাঝে মা মাবেয়া খাতুনকে নিজ সংসারে রেখে শেষ সম্বল বসতভিটার সাড়ে ১০ কাঠা জমি সুকৌশলে লিখে নিয়েছেন। বাবার নামে মাঠের তিন বিঘা জমিও চাষাবাদ করছেন। অন্য এক বিঘা জমি চাষাবাদ করছেন ছোট ছেলে সোহেল আহম্মেদ। জমি লিখে নেয়ার পর থেকেই মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার করতে থাকেন বড় ছেলে মিঠু আহম্মেদ ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন। সম্প্রতি বাড়ি থেকে বের করে দেন মাকে। স্থানীয় ধলা পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ দেন মা মালেকা খাতুন। অনেক বার চেষ্টা করেও মিঠুর বাড়িতে তুলে দিতে পারেনি পুলিশ। মা বাড়িতে গেলে বউ বৃষ্টি খাতুন আত্মহত্যা করবে বলে জানান মিঠু। কয়েকদিন আগে পুলিশ সুপার রাফিউল আলমের কাছে দেখা করেও কোনো সমাধান মেলেনি।
মাবেয়া খাতুন আরও বলেন, ছোট ছেলে সোহেল আহম্মেদ মাঠে কাজ করে সংসার চালায়। তার ঘরেও রয়েছে দুই সন্তান। মাঝে মাঝে ছোট ছেলে তাকে দেখাশোনা করেন। কিন্তু সব সময় তার ভরণপোষণ করতে পারেন না। বড় ছেলে মিঠু আহম্মেদের কাছে গেলেই তাড়িয়ে দেন। বেশিরভাগই রাত কাটাতে হয় প্রতিবেশীর বাড়িতে।
এ ব্যাপারে মিঠু ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
ধলা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্য এসআই সৈয়দ বখতিয়ার জানান, বেশ কয়েকবার মালেকা খাতুনকে সোহেল আহম্মেদের বাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ছেলে ও ছেলের বউ কোনভাবেই ওই মাকে মেনে নিতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে মালেকা খাতুনকে কোর্টে মামলা করারও পরামর্শ দেন তিনি।