ভিক্ষা বেশি পেতে মেয়ের পা পুড়িয়ে ক্ষত করে দিতেন মা

চট্টগ্রামে বেশি ভিক্ষা পেতে মেয়ের পায়ে পলিথিন বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে ক্ষত করেছে এক মা। একই সঙ্গে তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধীর অভিনয় কিভাবে করতে হয় শিখিয়েছিলেন তিনি। শনিবার (২২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত ও মেয়েটির আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আদালত সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড় বদনা শাহ মাজার গেটে সে মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করতেন। বেশি ভিক্ষা পেতে ওই হোসনে আরা বেগম মেয়েটির পায়ে পলিথিন পেঁচিয়ে পুড়িয়ে ক্ষত করে দিতেন। আর ভিক্ষার টাকায় তিনি ছক্কা (লুডু) খেলতেন। ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য হোসনে আরা বেগম গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়েটিকে একটি বাসায় কাজে দেয়। পরে ফের তাকে ভিক্ষা করার জন্য নিয়ে আসতে চায়। তবে ভুক্তভোগী মেয়েটি মায়ের কাছে যেতে চায়নি।

এদিকে এ কারণে রেগে হোসনে আরা বেগম চলতি বছরের গত ২৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এ সময় বলা হয়, বদনাশাহ মাজারের সামনে থেকে তার মেয়েকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আসামি করা হয় মেয়েটি যে বাসায় কাজ করতেন, সেই বাসার রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা আলী চৌধুরীকে। পরে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

পিবিআই জানান, হোসনে আরা বেগম ও শিশুটির নয় বছরের আরেক ভাইও ভিক্ষা করে। ভুক্তভোগী মেয়েটির বয়স যখন তিন বছর, তখন তার বাবা মারা যান। তারা দুই ভাই ও এক বোন। মেয়েটি ভাইবোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। তাদের স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। ফুটপাতে ভিক্ষুক মায়ের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুটির। বড় ভাই তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।

এ বিষয়ে পিবিআই এস আই জাহেদুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী শিশুটিকে অহরণের অভিযোগ করা হলেও ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যায়, শিশুটিকে অভিযুক্ত দম্পতির কাছে তুলে দেন হোসনে আরা। এ কারণে ওই দম্পতিকে জড়িত নন উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে আদালতে। এ ছাড়া কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে পারেননি ওই নারী।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা আদালতে ১০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি গত মাসে জমা দেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। এই ট্রাইব্যুনালে শিশু মামলার বিচার হয়ে থাকে। তবে শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে তার মা হোসনে আরা বেগমের ট্রাইব্যুনালে করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই এসব তথ্য পায়।

তবে ভুক্তভোগী মেয়েটি মায়ের জিম্মায় যেতে রাজি হয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে বর্তমানে চট্টগ্রামের ফরহাদাবাদে মহিলা ও শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসনকেন্দ্রে (সেফ হোম) রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী মেয়েটি গত ১ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের খাস কামরায় দুই পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়েছে।