‘নাতির মরদেহ পেলে অন্তত সৎকারের কাজটা করতে পারতাম’

বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। সারা রাত চরম উৎকণ্ঠায় কেটেছে পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর তীরে। বসে আছেন নৌকাডুবিতে নিখোঁজ নাতির খোঁজে। যদি অন্তত তার মরদেহটি পাওয়া যায়। তিনি এসেছেন উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে। তিনি বলেন, নাতির মরদেহটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম। তার মতো আরও অনেকে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে।

ষাটোর্ধ্ব কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ভাই এবং ভাইপোর খোঁজে এসেছেন আউলিয়া ঘাটে। তিনি জানান, নদীর ওপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাইপো সিন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। নৌকাডুবির খবরে কাল থেকেই এখানে অপেক্ষা করছেন তিনি।

মাড়েয়া বটতলী এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ সাত নিকটাত্মীয় এখনও নিখোঁজ। কাল থেকে তিনি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন।

তিনি বলেন, বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়া জন্য আমার ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে নৌকাডুবির ঘটনায় পড়ে। এখন পর্যন্ত কারো খোঁজ পাইনি। এখন তাদের লাশের অপেক্ষা করছি।

নৌকা ডুবে যাওয়ার পর তীরে সাঁতরে ওঠেন মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আমরা ওঠার কিছুক্ষণ পরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে মেশিনের ফিতা ছিঁড়ে যায়। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করে। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা ৫ জন বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতরে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। ওই মুহূর্তের কথা আসলে বর্ণনা করা সম্ভব না।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবু আলম বলেন, পঞ্চগড়, রংপুর কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে তিনটি ডুবুরি দল সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ভাটি অংশের ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অভিযান চালানো হবে।