ঢাবি, রাবি, চবি কিংবা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো পঞ্চাশোর্ধ অদম্য বেলায়েত শেখের। মনের আশা পূরণ করতে সকল প্রতিকূলতাকে পেছনে রেখে ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভালো প্রস্তুতি না থাকায় কোনো ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ না পেলেও দমে যাননি অদম্য বেলায়েত। তবে অবশেষে সফলতার দেখা পেলো বেলায়েত। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা সুযোগ সুবিধা পেলেই ভর্তি হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। দুপুর ২ টায় ফলাফল প্রকাশিত হলে ৬৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হয়ে খুশিতে আবেগ আপ্লূত হয়ে বেলায়েত শেখ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ব্যর্থতার পর আজ সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি আমি। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কৃতকার্য হলেও ভর্তি নিয়ে সংশয়ে আমি। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ভর্তি ফি থেকে শুরু করে সেশন ফ্রি অনেক বেশি হওয়ায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক টাকা পয়সার প্রয়োজন। কিন্তু আমার এতো টাকা পয়সা নেই। ভর্তি ফি থেকে শুরু করে সেশন ফ্রি পর্যন্ত আমাকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। এখন তারা অনুমোদন দিলেই ভর্তি হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুনজরই পারে আমার স্বপ্নকে পূরণ করতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমার পাশে দাঁড়ায় আমি উপকৃত হবো। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া উদ্যমী এই মানুষটি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। তার এমন প্রবল আগ্রহ থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে কূল পেয়ে উঠেননি বেলায়েত। ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন বেলায়েত। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় তাঁকে। ২০১৭ সালে ৫০ বছর বয়সে ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে।
এ বছর বেলায়েত ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি-ভোকেশনাল) জিপিএ ৪.৫৮ নিয়ে পাস করেন। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে জিপিএ ৪.৪৩ পেয়ে মাধ্যমিক সমমান দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন বেলায়েত।